Sunday, February 8, 2009

সম্পাদকীয় : অলোক-১৪১৩

সম্পাদকীয়

সৈয়দ আহমদ শামীম

অলোক-১৪১৩

মনুষ্যত্বের উদ্বোধন ঘটানো শিক্ষার কাজ। মানুষের জৈবিক সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিশোধণপূর্বক ব্যক্তি ও সমাজকে এক্তি পরিশীলিত রূপ দানই এর লক্ষ্য শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্র বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যার বিমূর্ত ক্ষেত্র হিসেবে রয়েছে ইতিহাস, ধর্ম, ঐতিহ্য লোকগাঁথা পুরাণ শ্রুতি ইত্যাদি সমাজ বা জাতিকে বিবেচনায় রেখে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার রেওয়াজ সভ্যতার যে কোন সময়ে স্বীকৃত ছিল এবং এখন তার মাত্রা প্রকতর হয়েছে শিক্ষা এবং প্রতিষ্ঠান আজ এতটাই সংশ্লিষ্টি অর্জন করেছে, প্রতিষ্ঠাঙ্কে এড়িয়ে শিক্ষা (এমনকি Ávb) অর্জনের চিন্তা কেউ করে না। এভাবে শিক্ষার অন্য অন্য বিমূর্ত ধারা প্রায় প্রান্তিক অবস্থানে চলে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের দাপট স্বীকার করে নিয়েছে। সেই অর্থে প্রতিষ্ঠান/সমূহেই এখন একই সাথে ব্যক্তি ও জাতির আশা-কাঙ্খা বাস্তব করবার দায়িত্ব নিয়েছে।


প্রতিটি ব্যক্তি যেমন স্বতন্ত্র আবার প্রত্যেক ব্যক্তির কিছু সামান্য গুণ থাকে। মানবতা, অন্যায় যুদ্ধের প্রতি ঘৃণা, দরিদ্রের সেবা, মিথ্যাকে না ইত্যাদি।এভাবে প্রত্যেক জাতি কিছু মৌলিক মানবিক আচরণে সাযুজ্য রক্ষা করে। আবার এ সকল সাযুজ্যসহ সে অপর জাতির চেয়ে স্বতন্ত্র। এই স্বাতন্ত্র্য সহজাত-স্বীকৃত। একে রক্ষা ও এর ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা ব্যক্তি ও জাতির নৈতিক কর্তব্য। যে সব গুরূত্বপূর্ণ উপাদান জাতীয় সতন্ত্রকে নির্মাণ করে সে সব হল ভাষা সাহিত্য ধর্ম বিশ্বা নির্দিষ্ট সামাজিক আচরণ বা মূল্যবোধ বিশিষ্ট খাদ্যাভাস অপর সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে বিচারের স্বকীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি।


শিক্ষার কাজই হয়ে থাকে এই সমূহ ঐতিহ্য ও বর্তমানকে পরম বিকশিত রূপের দিকে নিয়ে যাওয়া ও বিস্বসভ্যতার সাথে স্বকীয়তার ব্যক্তিত্বসহ যুক্ত করে উদ্বুদ্ধ করা। শিক্ষা ব্যক্তি ও জাতিকে স্বসভ্যতাবোধ ধর্ম বিশ্বাস কৃষ্টি ও আচরণের দিকগুলোকে আস্থা ও যুক্তির আলোকে পারিপালনে উৎসাহ দেয় ব্যক্তির মনকে করে প্রবুদ্ধ অপর জাতি সভ্যতার মানবিক ও প্রযুক্তিক উৎকর্ষের পোষণ জরুরী


সর্বোপরি, শিক্ষিত মানুষ তার শ্রেণী স্থান কালের উর্ধে উঠে অপর ব্যক্তি সংস্কৃতিকে ঔদার্যের সাথে গ্রহণে প্রণোদনা পাবে, জাতে বিশ্বমানব হবার যে প্রত্যয় মহাপুরূষদের হ্রদয়ে বেজেছে তার বাস্তব বিকাশ ঘটে। তবে শংকার কারণ হলো, এখনকার শিক্ষায় বৈশ্য প্রভাব বেড়েছে। বিশ্বমানব দূর অস্ত, মানুষ হবার বাসনাও আজ অপসৃত। পরার্থিতার যে বোধ মানুষকে তার আত্মলোলুপ জগত হতে টেনে মহতের আকাশ চিনিয়ে দেয় আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় তার চিহ্নটুকু তেমন অবশিষ্ট নেই। কেন নেই সেই প্রশ্ন করবার শক্তিও আমরা হারিয়েছি। এভাবে নিছক জীবন জীবিকার্থে ও অন্যকে হটিয়ে আত্ন প্রতিষ্ঠার এক প্রতিযোগিমূলক বিশ্ব সৃষ্টিই যেন শিক্ষার উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। স্বস্তিহীন শান্তিহীন কেবল প্রতিযোগিতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন মানুষকে Ávনীত্যবাদী বানাবার আর কোনো দায়িত্ব পালন করবে না। কিন্তু এই একদেশদর্শিতার পরিণাম তো স্পষ্টইঃ বিশ্বজুড়ে অশান্তি, যুদ্ধ এবং দারিদ্র। এটি একটি নিছক তথ্য যে, দেশের ৫ কোটি লোক দরিদ্র- এ তথ্যের জন্য দায়ী বাস্তবগুলোকে চেনা ও প্রতিকারের সত্যবোধ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শেখায় না। কিন্তু আমাদের প্রযুক্তি ও বিÁvশিক্ষাও কি আশাপ্রদ? প্রতিবেশী দেশসহ অপরাপর জাতি যেখানে বিÁv প্রকৌশলে বিশ্বমান অর্জনের দিকে ধাবিত সেখানে আমাদের অর্জন এক দুজন জামাল নজরুল ইসলাম আবেদ চৌধুরী বা আতাউল করিম।


বি
Ávন চর্চার সার্বিক দীনতার কারণসমূহ উপলব্ধি ও তার প্রতিকারপূর্বক জাতিকে বিÁvনমনস্করূপ গড়ে তুলবার প্রয়োজন রয়েছে। সর্বোপরি প্রয়োজন একটি মৌলিক শিক্ষাব্যবস্থা। শিল্প দর্শন গণিত বিÁvন ইতিহাস সাহিত্য Ávনের সকল শাখার অভেদ Ávন ও স্বতন্ত্র বিকাশকে নিশ্চিত করবে যে শিক্ষাব্যবস্থা তেমন প্রতিষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের অগ্রগতি সম্ভব। জীবনের সত্যÁvন ও বাস্তববুদ্ধির সমবায়ে আমরা উঠে দাঁড়াতে চাই। আগামী প্রজন্মকে এই বৃহত স্বপ্নের ভেতর চারিয়ে দিই।