Tuesday, March 24, 2009

পরজগত নিয়া মহাজনী ক্যাচাল

পরজগত নিয়া মহাজনী ক্যাচাল
আব্দুল ওয়াহেদ

সন্ত্রাসের দেশ নাই, কাল নাই, ভাই বেরাদার নাই, ধর্ম নাই, বর্ণ নাই....
আরো কতো কি যে শুনি। এভাবে তারা একটা নির্গুন চরিত্র অর্জন করিলো। তাই সন্ত্রাস মোকাবেলার ধরনও আর হইজাতিক রইল না। সে নিজেরে পরজাগতিক মানসিক বৈকল্যে হাজির করিলো। যাহার নাম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ। অনন্ত নামক ফেনামেনার সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করে বলি, জয় মহাগুরুর জয়। উত্তর থেকে দক্ষিন, পূর্ব থেকে পশ্চিম, .. থেকে বায়ু, ..থেকে নৈঝত, .. থেকে ঈশান, উর্ধ্ব থেকে অর্ধ সর্বত্র গুরুর জয় হোক।

অনন্তের কায়কারবার যখন ধর্ম কর্মে সীমাবদ্ধ থাকে তখন তারে ইচ্ছেমত গালি দেয়া যায় অথবা তোয়াজ করা যায়। কোনটাতে কোন মোক্ষ মিলে তা পরওয়ারদিগারই ভালো জানেন। সে যাই হোক অতঃপর আমরা যুদ্ধে সামিল হইয়াছি। বন্দ্ধুত্বের পরীক্ষায় উর্ত্তীন হইলাম বুঝি। সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত লোকেরা বলে কাহারো কাহারো বন্দ্ধুত্ব শত্রুত্বের সমাধিক। নিন্দুক সকল কালে ছিলো, থাকিবে এই নিয়ে দ্বিমত পোষনের কোন তরিকা কেউ জারি করতে পারে নাই। অর্থ্যাৎ দ্বিমত পোষনকারীরাও অনন্ত পরিমান। ঘটনা তা নহে, বরঙ ঘটনা চক্রে তারা একে সত্তুর হয়ে উঠে।

মাঝে মাঝে কিছু কিছু ফিকশনের হদিস মেলে। যেখানে বাঙলাদেশ নামক একখানা সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশের কথা বিধৃত হয়। যাহারা হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে প্রভুত গর্বে বুঁদ থাকিত, নানা তর্ককে আসল কাজ মনে করিত। তারপর কি হইল? কেউ জানে না। মনে হয় এমন কোন দেশ ছিলো না। না ডাইলের পরিমান বেশী হইয়া গেলো। এইভাবে বলা যাইতে পারে, তাহারা অনন্তের যুদ্ধে সামিল হইয়া নির্বাণ লাভ করিয়াছে। সে সূফি তরিকার সিলসিলা এখন আর জারি নাই, তারা সিলসিলা সুদ্ধ নির্বাণ লাভ করিয়াছে। ফিকশনের অধিকৃত স্থান বড়ই মনোহর। যা নাই তা সহজে আছে হইয়া যায় আর যা আছে তা বেমালুম গায়েব হইয়া যায়। ... আহারে পাষাণ দুনিয়া, কে কার খবর রাখে!!

হুঁ, যা বলছিলাম বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা আমজনতা ভাবিত আছি। ঘটনা তো মাত্র শুরু হলো, ঘটনার প্রাথমিক রুপ সূর্য্যের মতো আলোকময়। এখন আর মেঘের আড়ালে সূর্য্য হাসে টাইপ কথার কোন মূল্য নাই। সূর্য্য আকাশে তার আপন বেশে দৃশ্যমান, ওজোন স্তর সম্পূর্ণরুপে ধসিয়া গিয়াছে। এন্টি আলটা-ভায়োলেট ছাড়া কোন উপায় নাই। ইহা দুলর্ভ বস্তু, শ্রেণী সংগ্রামে কোন ফল মিলিতেও পারে, খাতা কলমে..

হে মহাগুরু, আকাশে বাতাসে রব উঠেছে রাষ্ট্র শন্কাকুল। সবাই নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে স্ব স্ব জান মালের হেফাজতে ব্যাতিব্যস্ত। গুরু হাসিয়া কহিলেন তোমাদিগ কি লখিন্দরের লোহার বাসর স্মরণে আসে না। মহাগুরু নমঃ!! আগ্রহের অতিশয্যে ইতিহাস বোধ লোপ পাইয়াছিলো। নিজেরে অনিরাপদ ভাবিতে দেখাইতেই নিরাপদ বোধ করিতে ছিলাম। গুরু বলিলেন, ইহাতেও একপ্রকার সুবিধা আছে, তোর নিরাপত্তার জন্য যা ইচ্ছে তা করিতে পারিস। তোদের বুদ্ধিমান পূর্বপুরুষরা বলে গেছেন জান বাঁচানো ফরয। কাফফারা দেবে জনগণ, আহা নিষ্পাপ জনগণ। যাহারা দেখিবার শুনিবার খাইবার জন্য লোলুপ নয়নে তাকাইয়া আছে। সে যা খায় তা আধ খেচরা খায়! হে জনগণ লাল সালাম। তুমরা যেমন তুমাদের পালের গোদা তেমন। ভুল বলিলাম, সে এক কাঠি সরস। সকল কিছু তুমাদের নামে জারি হয়। সম্মতি উৎপাদনের মাধ্যমসমূহকে সত্য মানিয়া সর্বদা সম্মতি উৎপাদন পুনরুৎপাদনে ব্যস্ত। তুমি চেতনায় বুঁদ হয়ে থাকা খোদার খাসি।

তোর চেতনা কেন প্রেরনা হয়ে আসে না। এটা জানিয়া রাখ তোর এই লড়াই হইলোকের, এই লোক রক্ষা পাইলে অতপর অন্যকিছু। অনন্তের মাঠে ময়দানে বন বাদাড়ে তোমরা নিজেদের নিজেরা মারিবে। ছলে বলে কৌশলে সকলকিছু জায়েয হবে, কিন্তু খেয়াল কারিবা তিল পরিমানও যেন মেদস্ফতি না ঘটে। জানি তাহাই ঘটিবে, যা!! তোর পুলসিরাত এই ইহলোকে।

আমি মিশু আর সমুদ্দুর কখনো ফিরে এলে অথবা নিলুর জন্য..

আমি মিশু আর সমুদ্দুর কখনো ফিরে এলে অথবা নিলুর জন্য..
আব্দুল ওয়াহেদ

সমুদ্র কি তোমারি মতো!! তোমার দিকে আরেকবার ফিরে তাকালাম, দেখলাম দৃশ্য সীমানার ভেসে আছে আকাশের ছায়া। আকাশ ছায়া মেলে তাকিয়ে আছে। নিরবতায়। অনেক কথাই বলে গেলে। সে যেন অনন্ত গল্প গাঁথা, যা বলতে হয় সুনসান নিরবতায়। মিশু তোমায় সে গল্পটা শুনিয়ে ছিলাম কোন এক চৈত্রের রাত্রিরে। বিশাল মাঠটা পেরুলে যেখান স্থির জলের লেক। মাথার উপর পরিপূর্ণ চাঁদ। জলের সুক্ষ ঢেউয়ে চাঁদ আরো বড় দেখায়। হয়তো আমি বলে ছিলাম দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে।

নিলু এসেছিলো চৈত্রের বাতাস হয়ে। লেকের টলটলে শীতল জল ছুঁয়ে। আমাদের ছেলে মানুষী কথা শুনে কাঁচ ভাঙ্গা ঝনঝন শব্দ...। হাসির কি বললাম!! সেতো তোমারি গল্প। মিশুকে জিজ্ঞেস করতে পারো, সে আমার মতো মিথ্যেবাদী নয়। মিথ্যেবাদী এই নামটি তোমারি দেয়া। তোমার সবকথায় আমার কাছে জলের মতো স্বচ্ছ। তুমি যাই বলো তা আমার মাঝে জলের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে সমুদ্দুরে মেশে। হয়তো তোমাকে আমি সমুদ্দুর বলে ডাকি তাই।

তুমি আনমনে সারাটা দুপুর জানালার সামনে দাড়িয়ে কাটিয়ে দাও। মেঘের দল তোমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপরও তোমার বিষস্নতা পরাজিত হয়না, তোমায় যেন আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে। যদি আমি মেঘ হতাম তোমার অজ্ঞাতে মেঘ হয়ে সারাটা বেলা..। আহা! নিলু আমাদের সমুদ্দুর দিনগুলো। স্মৃতি তোমায় পরাজিত কেন করে? তুমি আর আকাশের দিকে কোন কিছু খুঁজো না। আকাশ শুধু শূন্যতার হদিশ দেয়। ওখানে তোমার জন্যে কেউ অপেক্ষা করে নেই।

আমি একা একা লেকের পাড়ে। ছায়াময় টলটলে কালো জল। আমি ছুঁতে গেলে দূরে সরে যায়। হয়তো সবকিছু আগের মতো, আমিই দূরে সরে পড়ি। জৈষ্ঠ্যের কড়া রোদে একাএকা হাঁটি। আমার ছায়া পড়ে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কাঁদি। কিন্তু কোথায় সে চোখের জল, আমার তো কোন ইচ্ছে নেই, হতাশা নেই, আনন্দ নেই। শুধু মাঝে মাঝে দূরতম মরীচিকার মতো কি যেন আমায় তাড়া করে। আমরা ক'জনা..

শেষ বিকেলে মিশুর ঘুম ভাঙ্গে। মরা মরা আলোয় সবকিছু কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগে। কিছুক্ষন চুপচাপ শুয়ে থাকে। কি যেন মনে পড়ে পড়ে করে আর পড়ছে না। কিছুটা অস্বস্থি লাগে। হঠাৎ উঠে বসে, দুপুরে কিছু খাওয়া হয়নি। না, আর খেয়ে কাজ নেই। সে একা একা কিছুক্ষন হাঁটে।

তারপর মাঠের এক কোনে গিয়ে বসে। দূরের পাহাড় সারির দিকে তাকায়। ধীর পায়ে পাহাড় সারির দিকে এগুতে থাকে। বেশী দূর এগুতে পারে না। সামনে দৃশ্যটা বদলে গিয়ে জল ভরা সরোবর হয়ে য্য়। মিশু এগিয়ে যায়, পা ভেজায়... তারপর আমি আর নিলু আসি হাত ধরাধরি করে। আমরাও পা ভেজাই।

জোসনার আলোয় চারদিক প্লাবিত...
আমরা জলে পা ডুবিয়ে চুপচাপ। কতকটা কাল কেটে গেলে এমন দিন আসে আমরা কেউ জানি না। এতটুকুই জানি কোন অপেক্ষাই চিরন্তন নয়।

আমি, মিশু এবং সমুদ্দুরের গল্প অথবা রুপালী জোসনা

আমি, মিশু এবং সমুদ্দুরের গল্প অথবা রুপালী জোসনা
আব্দুল ওয়াহেদ

আমার পুত্র মিশুকে নিয়ে সমুদ্র দর্শনের ইচ্ছে ছিলো। মাফ করিস বাপ। আগের জম্মে না হয় বন্ধু ছিলি, তার আগের জম্মে ভাই। আগামী জম্মে না হয় আমিই তোর পুত্র হবো। তো এক বৃষ্টির দিনে দুজনে সমুদ্র দেখতে গেলাম। কিন্তু কি আর দেখব! একমাত্র যে বস্তুটা মোটামুটি দেখা যাচ্ছিল সে হলি তুই। এর মধ্যে সন্ধ্যা নেমে এলো। এই হলো তোর আমার সমুদ্র দর্শন।

সমুদ্র দর্শনে অদ্ভুত আবেগে আক্রান্ত হই। ইচ্ছে করে মনের সাধ মিটিয়ে কাঁদি। মনে আছে, রাতের আকাশটা অনেকসময় সমুদ্রের বালুকাবেলার মতো খাঁচ কাটা মনে হয়। আমরা সারাটা রাত সে জোসনা মাখা আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতাম। মনে হতো অন্য কোন পৃথিবীর সমুদ্র তীরে হাঁটছি, যেখানে আমাদের জগতের লজিক খাটে না।

পাগলা, তুই সব কিছুতেই এতো মজা করতি আমি আর নিলু হেসে খুন হতাম। এখনো সে মাঝে মাঝে এসব কথা বলে। যদিও বলা না বলায় তার কিছুই আসে না। নিলুকে মাঝে মাঝে সমুদ্র বলে ভুল হয়। তুই নিশ্চয় হাসছিস। এটাই তোর মুল কাজ, আমার কথায় এমনভাবে হাসতে থাকিস যেনো পাগলের প্রলাপ।

হুঁ আমরা ভালো আছি। আমি আর নিলু প্রায়ই নৌকায় ঘুরে বেড়াই। আমি নৌকার পাঠাতনে শুয়ে চশমাটা খুলে ফেলি। চারদিকটা ঝাপসা হয়ে আসে। নদীর পাড়টা অনন্ত দূরে সরে যায়। মনে হয় সমুদ্রে ভেসে চলেছি। এ অবস্থায় নিলু ধাক্কা দিয়ে নদীতে ডুবালো একদিন। একে তো চশমা ছাড়া কিছু দেখি না, তার উপর ভাটার নোংরা পানি। বকতে গিয়েও বকতে পারি নাই, মোটের ওপর ওর কান্ডটা আমার নিজেই ভালো লাগছিল।

আমার চোখের অবস্থা খারাপ। অনেক বেশী। ভাবছি নিলুকে নিয়ে একবার সমুদ্র দেখতে যাবো। বেচারী কখনো সমুদ্র দেখেনি। এই আমার শেষ সমুদ্র দেখা। কোন ভরা পূর্ণিমায় যাবো। নিলুর হাত ধরে থাকব। তারপর চোখের পর্দা খুলে পড়বে। জোসনার বিভ্রমে ঢাকা পড়বো আমি। হয়ত আমার জগত চির জোসনাময় উঠবে। নিলুই তো আমার সমুদ্র। জোসনা আর সমুদ্র চিরকাল আমার পাশে রবে।

আর তোকে সে আকাশে উড়তে দেবো। হু তোকে দেখতে যেকোন একদিন চলে আসব।

শুধু আজকের নয় আগামীকালেরও বটে

শুধু আজকের নয় আগামীকালেরও বটে
আব্দুল ওয়াহেদ

শুরু আর শেষের তফাৎ বুঝা সবসময় সহজ নয়। এমন হতে পারে আমরা যেটাকে শেষ বলছি তা প্রকারান্তরে নতুন করে শুরু হওয়া অথবা বলা যায় ঘটনার মোড় পরিবর্তন। ইতিহাসের যে অবস্থানে আমরা আছি প্রতি মুহুর্তে নতুন নতুন হতাশা যেন ছোবল মারছে। তবে আমরা সচেতনে হোক অসচেতনে বুঝি দ্বন্দ্ধ ছাড়া আমাদের এগুনোর কোন উপায় নাই। এটা ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে, গোষ্ঠিতে গোষ্ঠিতে হতে পারে। এটা হলো ইনসাফের প্রশ্ন। এটা এমন যে, যেখানে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা শক্তিকে সার্বভৌমত্ব ক্ষমতা দেয় না। এমনকি বিচারকেরও বিচার অবশ্যম্ভাবী।

আমাদের এই দ্বন্দ্ধ শুধু ব্যক্তি বা গোষ্ঠি প্রয়োজনে নয় বরঙ ব্যক্তিক ও সামষ্টিক দম্ভকে চুর্ন করে দেয়ার জন্য। নায্যতা কখনো কেন্দ্রীভূত থাকে না বরঙ থাকে বিভিন্ন ভরকেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়। তবেই শান্তি।

আমরা অলীক শৃংখলা স্বাধীনতার ঘোরে অন্ধ। অথচও এটা বুঝতে চাই না আমাদের অসংখ্য পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আপনি বা আমি যাকে শৃংখলা বলছি তা যে বঞ্ছনার শৃংখল নয় কে বলতে পারে। অথবা আমরা কতটুকু সত্য জানছি তা বলা সম্ভব নয়। আমরা কি দেখি, কি বুঝি সেও রহস্য বটে। নুন্যতমভাবে জানা উচিত অন্ধ হলে প্রলয় বন্দ্ধ হয় না। আমাদের অন্দ্ধত্ব অনুদারতা কর্তৃত্বপরয়নতা আজ অসংখ্য অন্যায় কাজ বৈধ করে দিচ্ছে। অতীতে দিয়েছে হয়তো ভবিষ্যতেও দেবে।

আজ অনেক নাটক হতে পারে, হতে পারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়াশীলতা কিন্তু কেউ বলতে পারবে না সত্য বদলে গেছে। ইতিহাস নিপীড়িতকে নিপীড়নের গল্প বলার সুযোগ দেয়, তার মানে এই নয় যে সে নিপীড়িতকে জবাব দেয়ার সুযোগ করে দেয় না। তা কতো নির্মম তা আজ আমরা দেখছি।

তাই বলে আমরা চাই না যেন তেন উত্তর দেয়ার মধ্যেই চুড়ান্ত ইনসাফ কায়েম হয়, বরঙ সকলকেই কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। হিসেব করতে হবে কে কি করল।

....ইনসাফ প্রতিষ্টাই বিপ্লবের লক্ষ্য।
সে বিপ্লবের অধিকার আম জনতার, তারা যতদিন না জেগে উঠবে ততদিন কোন ধরণের বিপ্লব সাধিত হবে না। তাই যেন আমরা ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা না করি এই সচেতনতা প্রয়োজন।

বাঙলাদেশ সহী হোক।